ঢাকা , বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫ , ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফের আইটেম গানে নাচবেন তামান্না সম্মানসূচক পাম ডি’অর পাচ্ছেন রবার্ট ডি নিরো মালাইকার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সিআইডিতে আসছে নতুন এসিপি বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানি গায়িকা আইমা বেগ হলে বাড়লো জংলির শো ছেলেকে নিয়ে ছুটি কাটাতে সিঙ্গাপুরে অপু নতুন ছবি নিয়ে পর্দায় আসছেন মোশাররফ করিম সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নির্দেশ মাউশির ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘরে ঢ়ুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা মোদির মতো নেতাকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই -সারজিস আট মাসের শিশুকে অপহরণের পর বিক্রি, ৮ দিন পর যশোর থেকে উদ্ধার ঈদযাত্রার ১১ দিনে সড়কে ঝরল ২৪৯ প্রাণ নওগাঁ বাড়ির ভেতরে মিললো ভাইবোনের মরদেহ পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ নয় জাটকা সংরক্ষণের আহ্বান মৎস্য উপদেষ্টার ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যা মামলায় আরসা প্রধানসহ ১০ জন কারাগারে মার্চে ৪৪২ নারী নির্যাতনের শিকার, ধর্ষণ ১৬৩ -মহিলা পরিষদ ১০ এপ্রিলের মধ্যে যোগদানের নির্দেশ প্রধান শিক্ষকদের বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে স্টার্টআপ খাতে ৯০০ কোটি টাকার তহবিল সবার অংশগ্রহণে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের প্রচেষ্টা -আলী রীয়াজ

ভর্তুকির সার সুফল পাচ্ছে না প্রান্তিক কৃষক

  • আপলোড সময় : ০১-১২-২০২৪ ১১:৩৫:০০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-১২-২০২৪ ১১:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন
ভর্তুকির সার সুফল পাচ্ছে না প্রান্তিক কৃষক
চাহিদার তুলনায় সারের যোগান কম হওয়ায় কৃষকদের প্রতি বস্তা সার ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে সার বিক্রয়ে কৃষি মন্ত্রনালয়ের তদারকির অভাবে উচ্চ মূল্যে ভর্তুকির সার বিক্রয়। চাহিদার তুলনায় ননইউরিয়া সারের যোগান কম, সার সংকটের সম্ভাবনা। প্রতি বছর সার আমদানিতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার, কিন্তু কৃষকরা তার সুফল পাচ্ছেনা। চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে সরকার নির্ধারিত সারের বিক্রয় মূল্য উপেক্ষা করে প্রতি বস্তা সার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রয় করছেন ডিলাররা।
বর্তমানে রবি ও বোরো মৌসূম চলমান, দেশে সারের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ সার রবি ও বোরো মৌসূমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই সুযোগে অসাধু ডিলারদের সিন্ডিকেট সারের চাহিদার তুলনায় সারের যোগান কম হওয়ার অজুহাতে অতিরিক্ত মূল্যে কৃষকদের নিকট সার বিক্রয় করছে। কৃষকদের অভিযোগ অনেক সার ডিলাদের নিকট সার পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের কাছে আছে সেখানে দাম বেশি, সরকার নির্ধারিত ১০৫০ টাকা মূল্যের ডিএপি সার ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা মূল্য নিচ্ছে। রবি শস্যবীজ বোপনের সময় ১৬ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই সময় মূলত নন-ইউরিয়া সার ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। নন-ইউরিয়া সার যদি সঠিক সময়ে কৃষক না পায় তাহলে কৃষি জমিতে সার ব্যবহার কম করবে। যার ফলে ব্যাপকহারে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে। ফসল উৎপাদন কম হলে দ্রব্যমূল্য কোনভাবে সরকার নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। আর বর্তমানে দেশের খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি হলে আমদানি করে জনবহুল দেশে খাদ্য ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়। চলতি বছরে যেখানে দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিস্বাস, আর যদি দেশে উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাহলে আগামি বছর সরকারের দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রন করা অসম্ভব হয়ে পরবে।
গত ১৯ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে কৃষি মন্ত্রালয়ের সচিবের অফিস কক্ষে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের কার্যনির্বাহি কমিটির সঙ্গে মত বিনিময় কালে বর্তমান কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন এই মূহুর্তে দেশে পর্যাপ্ত পরিমান সারের মজুদ রয়েছে। সারের বর্তমান মজুদ দিয়ে আগামি জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত কোন সংকট হবে না, তিনি আরো বলেন বর্তমান মজুদ দিয়ে মার্চ-এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত সারের চাহিদা মেটানো যাবে। অথচ কৃষি সচিবের বক্তব্যের সাথে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা ভিন্ন। উত্তর বঙ্গের অধিকাংশ জেলাগুলোতে নন-ইউরিয়া সারের দাম প্রতি বস্তা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে। কৃষকদের ভাষ্যমতে ডিলারদের কাছে পর্যাপ্ত সার না থাকার সুযোগে উচ্চ মূল্যে সার বিক্রয় করছে। বেশি টাকা দিলে সার পাওয়া যায়, বেশি টাকা না দিলে সার পাওয়া যায় না। এছাড়া দেশের পূর্বাঞ্চল যেমন মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি ও ফেনি জেলাতে নভেম্বর ২০২৪ সালে বরাদ্দের টিএসপি সার এখনো সম্পূর্ণ ডিলার পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়নি, কারণ বিএডিসি’র টিএসপি সার ঘাটতির কারণে। ডিসেম্বর ২০২৪ সালে বরাদ্দের বিপরীতে বিএডিসি’র সারের মজুদ অনেক কম। বিএডিসি’তে ডিসেম্বর মাসে বরাদ্দ যথাক্রমে টিএসপি সার ৯৩৬৮৪ মেঃটন, ডিএপি সার ১,৮৩,২৫৬ মেঃটন এবং এমওপি সার ১,২৮,৭৯৫ মেঃটন। কিন্তু বাস্তবে বিএডিসি’র অধিকাংশ গুদামগুলোতে টিএসপি এবং ডিএপি সারের মজুদ খুবই নগণ্য। চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহি, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, নওগা, বরিশাল, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলার বিএডিসি’র গুদামগুলো হতে ডিলারদেও মাঝে ডিসেম্বর মাসের বরাদ্দের সার দেয়ার মত পর্যাপ্ত সার মজুদ নেই। এছাড়াও নভেম্বর মাস শেষ হতে চললেও চলতি নভেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত টিএসপি ও ডিএপি সার ডিলার পর্যায়ে সম্পুর্ণ সরবরাহ করেনি বিএডিসি। বিএডিসি এর গুদাম সমূহে টিএসপি ও ডিএপি সার কম থাকায় গুদাম থেকে সার উত্তোলনের সময়সীমা ১০ দিন বৃদ্ধি করে মহাব্যবস্থাপক (সার ব্যবস্থাপনা) চিঠি প্রদান করেছেন। সারের মজুদ কম থাকায় বিএডিসি এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বিএডিসি’র আমদানিকৃত টিএসপি এবং ডিএপি সার পাইপলাইনে আছে তা দেশের বন্দরে পৌছানোর পর লাইটার জাহাজের মাধ্যমে ঘাটে খালাস করতে ডিসেম্বর ২০২৪ এর ১০ থেকে ১৫ তারিখ হয়ে যাবে। তাহলে কিভাবে বিএডিসি’র ডিলারদের মাঝে ডিসেম্বর ২০২৪ এর বরাদ্দের সার সরবরাহ করবে। বিষয়টি খুবই উদ্বিগ্নের। ডিসেম্বর মাসে সার সরবরাহে ঘাটতি হলে রবি ও বোরো শস্য উৎপাদন মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ইং তারিখে কৃষি সচিব, কৃষি মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, বরাবর স্বারক নং-০৫.৪৭.৫২০০.০০৫.০২.০০৩.২৪.৬৭৪।
উল্লেখিত লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি এইচ এম রকিব হায়দার এর আবেদনে বলা হয় যে, জেলায় প্রচুর পরিমানে ভুট্টা, গম, আলু, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে, বিধায় প্রচুর পরিমানে নন ইউরিয়া (টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি) সারের চাহিদা রয়েছে। বাফার গুদামে সারের পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় ডিলারগণ অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও সার নিতে পারছেনা। ডিলারদেকে সঠিক সময়ে সার সরবরাহ করতে না পারলে মাঠ পর্যায়ে রবি ফসল চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটবে এবং কৃষকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।
অথচ বর্তমান কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন এই মুহুর্তে দেশে পর্যাপ্ত পরিমান সারের মজুদ আছে কিন্তু বাস্তবে কি সারের পর্যাপ্ত মজুদ আছে? তাদের সিদ্ধান্তের কারণে কি দেশে সারের সংকট তৈরি হবে? এ অবস্থা চলমান থাকলে সামনের বোরো মৌসুমে সার সংকটের কারণে দেশের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ব্যহত হবে এবং চরম খাদ্যসংকটের মুখে পড়বে দেশ। এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা বর্তমান সরকারের জন্য চরম চেলেঞ্জের। অথচ যা কিনা খুব স্বভাবিক ভাবেই সমাধান হতো বা করা যেতো, যদি না সার ক্রয় সংক্রান্ত টেন্ডার নিয়ে বারংবার ছিনিমিনি খেলা করে কালক্ষেপন না হতো। নিম্নে টেন্ডার কল ও বাতিলের বিবরণ। কতিপয় দুষ্ট সিন্ডিকেট কতৃক সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় দেশের সুনামধন্য ঠিকাদাররা সমুহ বিপদের আশংকায় আর টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। বিধায় সার সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ। কৃষি সচিব ড. এমদাদ উল্যাহ মিয়ান বলেছিলেন ডিসেম্বর পর্যন্ত সারের কোন সংকট হবেনা। অথচ তিনি এখন তারই মদদ পুষ্ট সিন্ডিকেট কতৃক সৃষ্ট এই সংকট সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছে ধরর্না দিচ্ছেন। সময় অতিবাহিত হওয়ায় কেহ কর্নপাত করছেন না, ব্যবসায়িক রিস্কও নিচ্ছেন না।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স